Header Ads

পাইকগাছা ও কয়রার সীমান্তবর্তী আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী বদ্ধনদী আবারও ইজারা দেওয়ার চেষ্টা; এলাকাবাসীর প্রতিবাদ সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি।।পাইকগাছা ও কয়রা দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী বদ্ধনদী অবমুক্ত করা হলেও আবারও ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টার এ সংক্রান্ত একটি ডিও লেটারকে কেন্দ্র করে স¤প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে ইজারা চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে উপদেষ্টার সুপারিশ পত্র প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসী নদীটি অবমুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন দাবী করে আসছিল। যার প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৫ এপ্রিল স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক নিজেই নদীতে নেমে নেট-পাটা অপসারণ করার মাধ্যমে গাংরখী-শালুকখালী বদ্ধনদী অবমুক্ত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, পাইকগাছার গড়ইখালী ও কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৬০ একর আয়তনের ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ গাংরখী-শালুকখালী নদী অবমুক্ত করার জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন দাবী জানিয়ে আসছিল। নদীটি স্থানীয় গড়ইখালী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি ও গড়ইখালী ইউনিয়ন কৃষকলীগের আহবায়ক কামরুল ইসলাম গাইন ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন মৎস্য চাষ করে আসছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদীর বিভিন্ন স্থানে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নিস্কাষন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়। ফলে যার বিরুপ প্রভাব পড়ে এলাকার কৃষি উৎপাদনের উপর। পাশাপাশি যেসব পরিবার নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো অসহায় হয়ে পড়েন এমন অসংখ্য পরিবার। ফলে এলাকাবাসী নদীটি অবমুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন দাবী জানিয়ে আসছিল। এ নিয়ে এলাকার লোকজন মানববন্ধন ও একাধিক প্রতিবাদ সমাবেশও করে। ২০১৪ সালে আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকাবাসীর দাবীর সাথে একমতপোষণ করে নদীটি অবমুক্ত করার প্রতিশ্রæতি দেন। প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী তিনি এলাকার ৬টি নদী অবমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৯তম সভায় এলাকার পোল্ডার অভ্যান্তরে ¯øুইচ গেইট যুক্ত মরা কুচিয়া নদী, নড়া নদী, গাছুয়া নদী, উলুবুনিয়া নদী, ঘোষখালী নদী ও শালিকখালী (গাংরখী) নদী উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সংসদ সদস্যের সুপারিশের আলোকে মন্ত্রাণালয়ের সিদ্ধান্তগৃহিত জলমহলগুলো লীজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে উন্মুক্ত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মন্ত্রাণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪২৪ সনের ৩০ চৈত্র ইজারার মেয়াদ শেষ হলে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে নিজেই নদীতে নেমে নদীর সকল অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ করে আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী নদী অবমুক্ত ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিনপর নদীটি অবমুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসী এ দিন এলাকায় আনন্দ মিছিল করে সংসদ সদস্যকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। এদিকে অবমুক্ত করার আড়াই মাস যেতে না যেতেই পুনরায় নদীটি ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে নদীটি পুনরায় ইজারা দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। যা নিয়ে গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যদিও উপদেষ্টার আগে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কালীন ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রাণালয় বরাবর ইজারা প্রদান সংক্রান্ত অনুরূপ একটি ডিও লেটার প্রদান করেন। তার আগে মন্ত্রাণালয়ের আদেশ স্থগিত করে ইজারা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য গড়ইখালী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম গাইন মন্ত্রাণালয় বরাবর আবেদন করেন। এদিকে নদী ইজারা চেষ্টার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ন্যায় এলাকায়ও ব্যাপক তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ গড়ইখালীর গাংরখী বাজার সংলগ্ন নদীর পাড়েই অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বিপুল কুমার মন্ডল জানান, নদীর দুই পাড়ে হাজার হাজার হিন্দু স¤প্রদায় বসবাস করে। এটি যদি পুনরায় ইজারা দেওয়া হয় তা হলে এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়কে ভারতে চলে যেতে হবে। প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিপুল জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে নদীটি অবমুক্ত করা হয়। এটি যদি পুনরায় ইজারা প্রদান করা হয় তা হলে এলাকার কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষি উপর নির্ভরশীল শত শত পরিবার। ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বিশ্বাস প্রতিবাদ সমাবেশে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ইজারা প্রদান সংক্রান্ত সুপারিশ পত্র প্রত্যাহার করার জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের প্রতি আহŸান জানান। এ ব্যাপারে গড়ইখালী মৎস্যজীবি সমিতি ও ইউনিয়ন কৃষকলীগের আহবায়ক কামরুল ইসলাম গাইন জানান, মৎস্যজীবি সমিতির হত দরিদ্র সদস্যগণ গাংরখী-শালুকখালী নদীতে মাছ চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব পেতো। একই সাথে নদীর উৎপাদিত মাছ বিদেশে রপ্তানি করে অর্জিত হতো বৈদেশিক মুদ্রা। মন্ত্রাণালয় নদীটি অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলে সমিতির সদস্যদের কথা চিন্তা করে প্রথমে আমি নিজেই মন্ত্রাণালয় বরাবর আবেদন করি। এতে কোন কাজ না হওয়ায় পরবর্তীতে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী বরাবর গেলে মন্ত্রী মহোদয় একটি ডিও লেটার দেন। এরপর বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান মহোদয়ের নিকট আবেদন করি। উপদেষ্টা মহোদয় সমিতির সদস্যদের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে একটি ডিও লেটার প্রদান করেন। উপদেষ্টা মহোদয়ের উক্ত পত্রটির ভূল ব্যাখ্যা করে অনেকেই উপদেষ্টার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এলাকায় ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত খবরে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি এলাকাবাসীর প্রতি আহŸান জানান। ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শুক্রবারের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, গড়ইখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আয়ুব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন গাইন, বিএম শফি, প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু, ইউপি সদস্য বিপুল কুমার মন্ডল, রমেশ চন্দ্র বর্মণ, গৌরপদ মিস্ত্রী, রণজিৎ মন্ডল, বিকাশ চন্দ্র মন্ডল, মানষ কুমার মন্ডল, কাজল রানী বর্মণ, যমুনা বৈদ্য, সুনিতা মিস্ত্রী, চঞ্চলা রানী সরকার, গাউছুর রহমান, আব্দুস সাত্তার ও দেবাশীষ রায়।

কোন মন্তব্য নেই

Maliketh থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.