ডিপি ট্যুরের আসছে ভ্রমণে ভারতের সম্ভাব্য লোকেশন Truck করুন। ভারতের অপরূপা মেঘালয়ের দর্শনীয় যত স্থান
ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের সবচেয়ে সুন্দর
রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জল পাহাড়ের মেঘালয়। মেঘালয় নামের মাঝেই লুকিয়ে
আছে এর মাহাত্ম্য। মেঘের আলয়, মানে মেঘের বসত যেখানটায়। পাহাড়ের কোলে
মেঘের নিত্যখেলা আর জলপ্রপাতের গর্জনের সাথে অপরূপা মেঘালয় ঘুরতে হবে
সৌন্দর্য পিপাসু মন নিয়ে। আর মেঘালয় এমনই এক জায়গা যা আপনার পিপাসাকে বৃথা
যেতে দেবে না, আকণ্ঠ ভরে পান করতে পারবেন সেখাকার সৌন্দর্যের অমৃত।
বাংলাদেশ
থেকে খুব সহজেই মেঘালয় যাওয়া যায়, সেজন্য ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসাতে এন্ট্রি
পোর্ট হিসেবে থাকতে হবে “ডাউকি” বর্ডার। ডাউকি বর্ডার থেকে মাত্র ৮৩
কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেঘালয়ের বিখ্যাত শহর শিলং। শিলং থেকে মূলত শুরু
করতে হবে মেঘালয়ের যাত্রা। চলুন তাহলে দেখে আসা যাক কোথায় কোথায় ঘুরবেন
মেঘালয় গিয়ে।
মাওলিনং গ্রাম, শিলং
মেঘালয়ের আকর্ষণ শিলং আর শিলং এর আকর্ষণ
মাওলিনং গ্রাম। শিলং মূল শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, পরপর কয়েকবার
এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই গ্রামের একটি
রাস্তাতেও আপনি খুঁজে পাবেন না ময়লা বা আবর্জনা জাতীয় কিছু। মাওলিনং গ্রাম
নিজেই একটা ঘুরতে যাওয়ার স্থান।
![]() | |
মাওলিনং গ্রাম, ছবিঃ Dp Tour |
এখানকার ঐতিহ্যবাহী বাড়িঘর আর পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত সৌন্দর্য।
এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাওলিনং ঝর্ণা। বিশাল এই ঝর্ণার সামনে সময় থমকে
যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। মাওলিনং ঝর্ণায় যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুন
থেকে সেপ্টেম্বর। ঝর্ণার আশেপাশে হরেক রঙের অর্কিড আর নানা লতাপাতার সমাহার
একজন ট্রাভেলার এবং ফটোগ্রাফারকে দেবে পূর্ণ তৃপ্তি। মাওলিনং ঝর্ণার
পাশাপাশি এই গ্রামে আছে ৮৫ মিটার উঁচু হাই-স্কাই ওয়াচ যেখান থেকে
বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের পুরো সমতল দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে
জীবন্ত শেকড়ের ব্রীজ যা এখানকার ভ্রমণাকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
লাই লাতলুম গিরিখাত, শিলং
প্রায় সবক্ষেত্রে একটা তরুণ ভ্রমণ দলের মধ্যে একজন না একজনকে পাওয়াই যায় যিনি ট্রেক করতে ভালোবাসেন। মেঘালয়ে যদি ট্রেকের সন্ধান করে থাকেন তবে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে লাই লাতলুম গিরিখাত। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার এই ট্রেকে আপনি পৌঁছে যাবেন এমন এক স্বর্গীয় জায়গায় যেখান থেকে মেঘালয়ের পুরো দৃশ্যটা চোখের দৃষ্টিতে ধরা পড়বে।![]() | |
লাই লাতলুম গিরিখাত,ছবিঃ Dp Tour |
মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টার ট্রেক হলেও বেশ কষ্টসাধ্য এই গিরিখাত উতরানো, তাই
সঠিক গাইডলাইন আর ট্রেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে যেতে হবে
সেখানে। একবার পৌঁছে গেলে চারদিকের অপরূপতা দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
ফেরার সময় অবশ্যই গাইডকে বলে নেবেন লাওয়াই জলপ্রপাতে যাবার কথা, তাহলে পুরো
ট্রেকের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এক নিমিষেই।
ডাবল ডেকার জীবন্ত শেকড়, চেরাপুঞ্জি
ভারতের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি
হয় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। দেখার মতো অনেক কিছুই আছে এখানে, তবে যে জায়গাটি
কেড়ে নিয়েছে সবার নজর তা হলো ডাবল ডেকার লিভিং রুট বা জীবন্ত শেকড়।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল এই শেকড় কালের অন্তরে রূপ নিয়েছে প্রকাণ্ড
সেতুতে, তাও আবার উপরে এবং নিচে মোট সেতু সংখ্যা দুটি।
![]() |
ডাবল ডেকার জীবন্ত শেকড়, ছবিঃ Dp Tour |
চোখের শান্তি পেতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে প্রচুর
পর্যটক। তবে কথায় আছে, কোনো ভালো জিনিসই বিনা কষ্টে আসে না, এই জায়গাও তার
ব্যতিক্রম নয়। এখানটায় আসতে হলে আপনাকে পার হতে হবে মসে আচ্ছাদিত পিচ্ছিল
২,০০০ সিঁড়ি যা পার হতে ভালো ভালো ট্রেকারদেরও লাঠির প্রয়োজন হয়। ২,০০০
সিঁড়ি পার হওয়া যেমন চাট্টিখানি কথা নয় তেমনি দুর্বলচিত্তের মানুষদের এখানে
আসাও উচিত নয়। তবে সাহস করে এই লম্বা বিপদজনক পথ পাড়ি দিয়ে ফেললে চোখের
সামনে দেখা মিলবে বিখ্যাত সেই ডাবল ডেকার সেতুর যা দেখার লোভ মেঘালয়ে ঘুরতে
আসা খুব কম লোকই সামলাতে পারে।
দ্য এলিফেন্ট ফলস, শিলং
শিলং মেঘালয়ের জাদুর শহর। প্রচুর ভ্রমণ
আকর্ষণের মধ্যে এখানে লুকিয়ে আছে এলিফ্যান্ট ফলসের মতো আরো অনেক আকর্ষণ।
শিলং ঘুরতে গেলে মানুষ যে জায়গাটায় প্রচুর যায় তা হলো এলিফ্যান্ট ফলস বা
ঐরাবত জলপ্রপাত। এরূপ নামকরণে পেছনে কারণও আছে যথেষ্ট। এই জলপ্রপাতের কালো
পাথরগুলো মিলিত হয়ে এক ঐরাবত আকৃতির সৃষ্টি করেছিল, সেই থেকে এর নাম দ্য
এলিফ্যান্ট ফলস।
![]() |
দ্য এলিফেন্ট ফলস, ছবিঃ Dp Tour |
যদিও দূর্ভাগ্যবশত মেঘালয়ের এক ভূমিকম্পে সেই আকৃতি আর এখন নেই, তবুও এই
জলপ্রপাতের সৌন্দর্য কমেনি এতটুকুও। তিন ধাপে গঠিত এই জলপ্রপাতের প্রতি
ধাপেই খেলা করে অজস্র জলরাশি। বিকেল বেলায় এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য লিখে
বোঝানো যাবে না, প্রতিনিয়ত কালো পাথরের গায়ে আছড়ে পড়া বিশাল সেই জলপ্রপাতের
উপর গোধুলী বেলার সূর্যকিরণ যখন প্রতিফলিত হয়ে চোখে ধাঁধা লাগায় তখন এর
আসল সৌন্দর্য বোঝা যায়। তবে সেটা আরো ভালো করে বুঝতে হলে যেতে হবে শিলংয়ে
আর ঘুরে আসতে হবে ঐরাবত জলপ্রপাতটি।
কোন মন্তব্য নেই