এবার হবে বরফের সাথে খেলা, ১০৬ টি টানেলের মধ্যে দিয়ে টয় ট্রেন ছুটে চলা, ওয়াল্ড হেরিটেজে স্থান পাওয়া
তারুণ্য পাহাড় ভালোবাসে, ভালোবাসে মেঘ,বরফ, প্রকৃতি! আর সেটা যদি হয়
সবচেয়ে উত্তরের কোন রাজ্যে যেখানে বরফের পাহাড় মেঘে ঢেকে গেছে তাহলে তো
সোনায় সোহাগা!
বলছি বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২২০০ কিমি দূরের ভারতের সবচেয়ে উত্তরের
প্রদেশ হিমাচল প্রদেশের কথা! হিমাচল তার সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়েছে শিমলা,
মানালি, আউলি, কাশমীর, লাদাখ সহ আরো অনেক পাহাড়ি গ্রাম-শহর দিয়ে!
ছোটবেলায় "ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি" সিনেমাটি দেখে ইচ্ছে জেগেছিল জীবদ্দশায় মানালিতে একবার পা ফেলার!
শিমলার উদ্দেশ্যে! টিকেট কাটতে হবে "ফেয়ারলি প্লেস" থেকে ফরেন কোটায়
রিটার্ন সহ, টিকেটের আসল দাম ৯৮০ রুপি, ফরেন কোটায় ১১০০ রুপি। ট্রেনে শিমলা
যেতে হলে আপনাকে উঠতে হবে "কালকা" গামী কালকা মেইল ট্রেনে। জার্ণি ডিউরেশন
পাক্কা ৩৩ঘন্টা! তাই বুঝে-শুনে হালকা কাপড় পড়তে হবে আর নিয়ে নিতে হবে শুকনা
খাবার। কোলকাতা থেকে শিমলা সরাসরি বাই এয়ারেও যাওয়া যায়। যেহেতু বাজেট
ট্যুর দিচ্ছি তাই বিমানে পদধূলি দিলাম না!
ট্রেন ছেড়ে দিল ঠিক ৭:৪০ এ। রাত টা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। রাতে
"এলাহাবাদ" এ হল্ট করবে ১০ মিনিট। পরদিন কানপূর, আলিগড় হয়ে রাতে থামবে ওল্ড
দিল্লি স্টেশনে। তারপরদিন সকাল ৮:৩০ এ নামিয়ে দিবে "কালকা" স্টেশনে।
কালকা থেকে মূল এডভেঞ্চার শুরু। কালকা থেকে "টয় ট্রেন" ছেড়ে যায় শিমলার
উদ্দেশ্যে। আপনি যদি প্রথমবার শিমলা যাচ্ছেন তবে কখনোই এই টয় ট্রেনের
অভিজ্ঞতা মিস করে যাবেন না। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সরু রেললাইন বেঁয়ে ওয়ার্ল্ড
হেরিটেজে স্থান পাওয়া টয় ট্রেন আপনাকে শিমলা নিয়ে যাবে গুণে গুণে একশো ছয়টি
টানেলের মধ্যে দিয়ে। সময় লাগবে ৬ঘন্টা। জীবন থেকে এই ছয় ঘন্টা আপনি কখনোই
ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না। পাহাড়ের উপর লাল-সবুজ বাড়িঘর আর গাড়ির রাস্তার
সৌন্দর্য্য চোখ ফেরাতে দিবে না।
কালকা থেকে টয় ট্রেনে দুইভাবে যাওয়া যায়। সিট বুক করে (কোলকাতা থেকে,
শিবালিক ডিলাক্স, ৫০০ রুপি) অথবা জেনারেল কোটায় (আগে ট্রেনে উঠে সিটে বসলে
আগে পাবেন এই ভিত্তিতে সিট ফিলাপ হয়, ৫০রুপি)।
আমরা ভাগ্যক্রমে ৫০ রুপি দিয়ে টিকেট কেটে সিট পেয়েছিলাম। মোট ৩৯ ঘন্টার
দীর্ঘ জার্ণি শেষে পৌছে যাবেন প্রায় ১৮০০০ ফুট উচ্চতার শিমলা শহরে।
শিমলা শহরে ঢুকলেই দেখবেন বহু দূর থেকে পাহাড়ে উপর বীরদর্পে মাথা উচু
করে আছে "হনুমান মূর্তি"। মন্দিরটির নাম "জাখু মন্দির", শিমলার অন্যতম
ট্যুরিস্ট স্পট।
শিমলা শহরে হোটেলগুলোর ভাড়া ১০০০-১২০০ রুপি। ঠান্ডা যেহেতু অনেক বেশি
রুমে গিজার আছে কিনা চেক করে উঠে পড়ুন আর ফ্রেশ হয়ে নিন। সন্ধ্যায় রাতের
শিমলা এক্সপ্লোর করতে বের হয়ে যান। হেটে হেটে চলে যান মল রোডে, ইউরোপের কোন
সন্ধ্যার ফিল পেয়ে যেতে পারেন।
পায়ে হাটা দূরত্বে ঘুরে আসুন কালী বাড়ি, শিমলা চার্চ।
পরদিন শিমলা লোকাল স্পটগুলো ঘোরার জন্য গাড়ি (টাটা অল্টো ফোর সিটার) ঠিক
করে রাখুন, ১২০০ রুপি নিবে। মল রোডে অনেক গুলা ট্যুর এজেন্সী আছে যেগুলা
শিমলা, মানালি একসাথে কভার করায়। আমরা হিসেব করে দেখলাম যে খরচে ভেঙ্গে
ভেঙ্গে শিমলা+মানালি ঘুরবো তার থেকে কম খরচে হয়ে যাচ্ছে এজেন্সী দিয়ে।
প্যাকেজে যা যা ছিলঃ
১. শিমলা লোকাল স্পট (গ্রিণ ভ্যালি, জাখু মন্দির, কুফরী, একটা এমিউজমেন্ট পার্ক)
২. শিমলা-মানালি বাই টাটা অল্টো
৩. মানালি লোকাল স্পট (হাদিম্বা টেম্পল, মানু টেম্পল, মানালি ক্লাব হাউস, বশিষ্ঠ টেম্পল)
৪. মানালি-রোথাং
৫. রোথাং এর পারমিশন চার্জ (৬০০ রুপি)
১) শিমলা ট্রিপ= ১২০০ রুপি ক্যাব (৪জনের)
২) শিমলা টু মানালি বাস (New bus stop shimla থেকে কিনতে হবে) = ৭০০ রুপি
৩) মানালি লোকাল স্পট= ১০০০-১২০০ রুপি পার ক্যাব
৪) মানালি টু রোথাং= অফসিজনে ২০০০রুপি আর অনসিজনে ৬০০০ রুপি পর্যন্ত হয়।
৫) রোথাং এর পারমিশন চার্জ= ৬০০রুপি
ম্যানুয়ালি/ এজেন্সি যেভাবেই যান মানালি পৌছেই রোথাং এর পারমিশন টা করিয়ে নিতে বলবেন ড্রাইভার কে। এইক্ষেত্রে ১ম দিন পারমিশন না পেলে ২য় দিন পারমিশন পাওয়ার চান্স থাকে। যেদিন পারমিশন পাবেন সেদিন ভোর ৪:৩০ এ ড্রাইভারকে পিক করতে বলবেন। নাহলে গাড়ির সিরিয়াল অনেক বেশি হয়ে যাবে আর সময় নষ্ট হবে।
যাই হোক এজেন্সী দিয়ে গাড়ি ঠিক করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। খাবারের খরচ মোটামোটি সব জায়গায়ই ১০০-১৫০ রুপির মধ্যে।
পরদিন সকাল ৭টায় ড্রাইভার হোটেল থেকে পিক করে নিয়ে গেল জাখু মন্দিরে।
একে একে গ্রীণ ভ্যালি আর এমিউজমেন্ট পার্ক শেষে কুফরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলাম। শিমলায় গিয়ে কুফরী যাবেন অবশ্যই। কুফরী হচ্ছে শিমলার সবচেয়ে উচু
স্থান, সেখান থেকে "চায়না গ্রেট ওয়াল" দেখা যায়! চমকে গেলেও এটাই সত্যি,
কুফরী থেকে বাইনোকুলার দিয়ে দেখা চায়নার গ্রেট ওয়াল। কুফরী তে যেতে হয়
ঘোড়ায় চড়ে। এত রোমাঞ্চকর ঘোড়সওয়ারি ৫০০ রুপি তে পেলে ভড়কাবেন না, ফিরে
আসবেন না, কারণ এই জিনিস গেলে আর আসবে না।
শিমলা ডে ট্রিপ শেষ হয়ে যাবে দূপুরের আগে, তাই হোটেল থেকে চেক-আউট করে
রওনা দিলাম মানালির উদ্দেশ্যে। পথে বিশাল লম্বা এক টানেল পড়বে ৫ কিমি এর
মতো, ওটা দিয়ে পাক্কা আট ঘন্টা পর পৌছালাম ড্রিম ডেস্টিনেশন "মানালি"।
কোন মন্তব্য নেই