Header Ads

আসছে ডিসেম্বর ২০১৯ এর হিমাচল ট্যুর (কলকাতা-শিমলা-মানালি-দিল্লী-আগ্রা) (২য় পর্ব)

রোথাং পাস যাওয়ার পথে- সোলাং ভ্যালি
২য় পর্ব (মানালি)
(প্রত্যেকটি ছবির সাথে ক্যাপশন যুক্ত আছে)
(ষষ্ঠ দিন)
ভোরবেলা পৌঁছাই মানালি। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা ছিলো সেখানে। ভোরবেলা বলে মলরোডে লোকের ভিড় ছিলো না। হাটতে হাটতে হোটেল খুঁজতে থাকি। এর মধ্যে চারিদিকে আলো ফুটে উঠে। দূরে পাহাড়ের গায়ে সোনালী রোদের প্রথম কিরণ পড়তেই চূড়ায় জমে থাকা বরফ দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ি। হোটেলে এসে রেস্ট নিয়ে আবার বেলা করে বেরোলাম। গতদিন বরফঠাণ্ডা বৃষ্টিতে ভিজে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা হোটেলেই থেকে যায়। মানালি শহর জুড়ে হাটতে হাটতে ঘুরিফিরি ক্লাবহাউস, হাদিম্বা টেম্পল, বনবিহার আর তিব্বতিয়ান মনেস্ট্রি।
ক্লাবহাউস জায়গাটা বেশ সুন্দর। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা থেকে সৃষ্ট বিয়াস নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে স্থানটি। কয়েক ধরনের এডভেঞ্চার একটিভিটি আছে সেখানে। আমরা তিনজন জিপলাইনিং করে নদীটা ক্রস করলাম। সেইরকম মজা লাগলো।
তারপর গেলাম হাদিম্বা দেবীর মন্দিরে। প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেখানে ভীড় করছিলেন। সেখান থেকে আবার মল রোডে ফিরে আসলাম। একটু এগোলেই বন বিহার। জায়গাটি অনেকটা পার্কের মতো। আমাদের দেশের মত বিভিন্ন কোনায় জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েরা বসে ছিলো। তারপর আমরা গেলাম তিব্বতিয়ান মনেস্ট্রিতে। এখানেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপক আনাগোনা। জায়গাটি বেশ ভালো লাগলো।
সেখান থেকে হোটেলে ফিরে এসে বিশ্রাম নিয়ে আবার রাতের মানালি দেখতে বের হলাম। রাস্তায় এখন বেশ ভিড়। এর মধ্যে একটু ঘোরাঘুরি করে রাতে চিকেন বিরিয়ানী খেয়ে দ্রুত হোটেলে ফিরে এসে শুয়ে পড়লাম। পরদিন যে আমাদের ট্যুরের প্রধান আকর্ষণ রোথাং পাস যেতে হবে!
গতদিন দূর পাহাড়ের চূড়ায় জমে থাকা যে বরফ দেখেছিলাম আজ তার কাছাকাছি চলে এসেছি।
প্রচণ্ড জ্যাম। ভারতের সব লোক বোধহয় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে রোথাং পাসের রাস্তায়
(সপ্তম দিন)
সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম আমরা। গতদিন গাড়ি রিজার্ভ করে রাখা হয়েছিলো। সেটাতে চড়ে বসলাম। খানিক বাদেই গাড়িটি আবার পাহাড় চড়তে লাগলো। যত সময় গেল শুধু উপরে উঠতেই থাকলাম। পথে এক জায়গা থেকে বরফে চলার জন্য কাপড় ভাড়া করে নিলাম। একসময় পৌঁছুলাম সোলাং ভ্যালিতে। জুন-জুলাই মাস ছাড়া বছরের অনান্য সময় এতো বরফ পড়ে যে রোথাং পাসের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন সোলাং ভ্যালিতেই বরফ পাওয়া যায়। সেখানে তেমন কিছু দেখলাম না। আবার গাড়িতে চড়ে চলতে শুরু করলাম। মাত্র দেড় মাস খোলা থাকে বলে রোথাং পাসের রাস্তায় প্রচণ্ড ভীড়। পুরো ভারত থেকেই প্রচুর মানুষ এসেছে। সাদা চামড়ার দুয়েকজন বিদেশীও দেখলাম। এরকম পাহাড়ি রাস্তাতেও দেখলাম প্রচুর মানুষ বাইকে করে যাচ্ছে। এমনকি দুই-তিনজন সাইক্লিস্টসও দেখলাম। রাস্তায় জ্যামে বসে থাকতে হলো অনেকক্ষণ। হাজার হাজার গাড়ির সিরিয়াল রোথাং পাসের রাস্তায়। ধীরে ধীরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যাচ্ছি। এখন বেশ কাছ থেকেই বরফ দেখতে পাচ্ছি। দূরে অনেক নিচে দেখা যাচ্ছে মানালি শহর!
অবশেষে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩ হাজার ফিট উচ্চতায় রোথাং পাসে পৌঁছুলাম। চারিদিকে বরফ আর বরফ। হাত দিয়ে একদলা বরফ ছুঁয়ে দেখলাম। বেশ ভাল লাগছিলো। অনেক মানুষ এসেছে এখানে। আমরা বরফে স্লাইডিং করলাম। স্নো বল বানিয়ে একে অপরকে ছুড়ে মারলাম। এর মধ্যে ঠিক মাথার উপরেই মেঘ ঘনিয়ে আসলো। শুরু হলো বৃষ্টি। ঠাণ্ডায় কাঁপন ধরে গিয়েছিলো। পরে গাড়িতে চলে আসলাম। বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি ছেড়ে দিলো। পুরোটা জায়গা মেঘে আচ্ছাদন করে রাখায় আশেপাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিলো না। গাড়িগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে খুব সতর্কতার সাথে চলছিলো। রোথাং পাস আসার পথে আমরা পাহাড়ের এক রূপ দেখেছিলাম। এখন আবার ফেরার পথে আরেক রূপ দেখতে পেলাম। মাঝে গাড়ি ব্রেক দিলো। নেমে চা নাস্তা করলাম। আর চোখের সামনে অভূতপূর্ব একটা দৃশ্য দেখলাম। চোখের সামনে মেঘ জমতে দেখলাম। যে দৃশ্যটা খুবই সুন্দর ছিলো। এভাবে চলতে চলতে মানালি পৌঁছলাম। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। রুমে খাবার নিয়ে এসে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম।
রাস্তায় ঝুলে থাকা একখণ্ড মেঘ
(অষ্টম দিন)
আমি ঘুম থেকে উঠলাম প্রায় এগারোটায়। বাইরে বৃষ্টির মধ্যেই সকালটুকু যে যার মতো ঘুরলো। আমি কম্বল পেঁচিয়ে আরাম করে শুয়ে শুয়ে ভারতের চ্যানেলগুলো দেখতে লাগলাম। গোসল করে রেডি হয়ে নিলাম। দুপুরবেলা বের হয়ে খাওদাওয়া করে মল রোডের পাশেই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠলাম। তিনটা বিশে দিল্লীর উদ্দেশ্যে বাস ছাড়লো। একটু ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ায় ঔষধ খেয়েছিলাম যার ফলে বাসের সিটে হেলান দিয়ে মরার মত ঘুমালাম। মাঝে একটু সময় হুশ ফিরে আসলে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মানালি থেকে কুল্লু-মান্ডির রাস্তায় আমরা। বিয়াস নদীর তীর ঘেঁষে দুই পাহাড়ের মাঝের গিরিখাতে বাস ছুটে চলেছে। যত নামতে লাগলাম ততই নদীর প্রশস্ততা আর স্রোত বাড়তে থাকলো। মাঝখানে একটা পাহাড়ের ভেতর টানেল পার হলাম। আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙলো রাতের বেলা বাস একটা রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য ব্রেক দেওয়ায়। আবহাওয়া ঠাণ্ডা থেকে আবার অনেকটাই গরম হয়ে গিয়েছে। খাবারের দাম না জানি কেমন হয় এই ভয়ে ভয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখি মাত্র ৭০রুপিতে ব্যুফে দিচ্ছে যাতে আছে আনলিমিটেড রুটি, সবজি, ভাত ইত্যাদি! (আগামী পর্বে সমাপ্য)

কোন মন্তব্য নেই

Maliketh থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.