Header Ads

ভূস্বর্গ কাশ্মীর ভ্রমণে খরচ কত, কী দেখবেন

কাশ্মীরকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়। কেন স্বর্গ বলা হয় আসলে নিজ চোখে না দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন না। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, কাশ্মীর অনেক দূর, অনেক খরচের ব্যাপার এবং যুদ্ধপ্রবণ এলাকা। এ জন্য যাওয়া ঠিক হবে না। কথাটা কিন্তু একেবারেই যে মিথ্যা, তা না আবার পুরোপুরি সত্যি তাও না। কাশ্মীর অনেক দূর এটা ঠিক কিন্তু এর থেকেও দূরে তো আপনি ভ্রমণ করতে যান, তাই না। অনেক খরচের ব্যাপার কি না সেটা নিয়েই একটু আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু অনেকেই ভয় পান যুদ্ধপ্রবণ এলাকা বলে এটা একদম উড়িয়েই দেওয়া যায়। কারণ বর্ডার থেকে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো মোটামুটি ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে। সুতরাং আর দেরি না করে আপনি নির্ভয়ে বেরিয়ে পড়ুন কাশ্মীরের উদ্দেশে।
কীভাবে যাবেন
কত খরচ পড়তে পারে  কাশ্মীর ভ্রমণে। পুরো কাশ্মীর ট্যুর প্ল্যান আপনাদের জন্য সুন্দরভাবে সাজানো হলো এবং তার প্রতিটা খরচ নিচে দেওয়া হলো। আপনি মিলিয়ে নিতে পারেন আসলেই কাশ্মীর ভ্রমণ কি খুব বেশি খরচের ব্যাপার কি না। তবে চলুন আর দেরি নয়, কাশ্মীর ঘুরে আসি।
শুরুতেই আপনি এক হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে সোজা কলকাতার বাসের টিকেট কিনে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। পথিমধ্যে হালকা স্ন্যাকস খেয়ে নিতে পারেন। খরচ পড়বে ১০০ টাকা। সকালে বেনাপোল বর্ডারে নাশতা খেয়ে নিতে পারেন ১০০ টাকার মধ্যে। সব মিলিয়ে মোট খরচ হবে দুই হাজার টাকা। এরপর কলকাতা পৌঁছে একটি হোটেলে দিন হিসাবে চেক ইন করতে পারেন ৫০০ রুপি দিয়ে। দুপুরের খাবার খান। ২০০ রুপির ভেতরেই। রাতের জন্যও একই রকম, ২০০ রুপি। জম্মু যাওয়ার ট্রেনে ভাড়া পড়বে এক হাজার ৯৭০ রুপি। এই হিসাবে আপনার খরচ হলো দুই হাজার ৮৭০ রুপি যা বাংলা টাকায় তিন হাজার ৭০০ টাকার মতো। এরপর সারা দিন ট্রেনে। খাবার খান, ৫০০ রুপির মধ্যে যা বাংলাদেশি টাকায় ৬৫০ টাকা। এরপর আপনি জম্মু পৌঁছাতে পারেন। সকালের নাশতা ১০০ রুপি। দুপুর ও রাতের খাবার ৪০০ রুপি। গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন শ্রীনগর। মোট খরচ ৫০০ রুপি হিসাবে ৬৫০ টাকা। শ্রীনগরের হোটেল এবং গাড়ির ভাড়া নিয়ে পরে কথা হবে। সময় পেলে সোনমার্গ ঘুরতে যেতে পারেন। দুপুরের খবার ২০০ রুপি (২৬০ টাকা)।
আপনার ভাগ্য যদি ভালো হয় তাহলে সোনমার্গে পৌঁছে আপনি অঝোর ধারায় তুষারপাত দেখতে পাবেন। শুরুতেই স্থানীয় একটি দোকান থেকে আপনি হ্যান্ডগ্লাভস কিনে নিতে পারেন। এরপর বরফ মোকাবিলার জন্য মোটা জ্যাকেট ও গানবুট ভাড়া করতে পারেন। এরপর লোকাল একটি গাড়ি ভাড়া করে আপনি সোনমার্গের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে আসতে পারেন। ড্রাইভারই নিয়ে যাবে আপনাকে। আপনার কাছে যেগুলো হাতের নাগালে সেগুলোই ঘুরে দেখুন। অযথা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কী লাভ। 
তুষারপাতের সময় সোনমার্গ।
 গুলমার্গ ঘুরতে যেতে পারেন আপনি। দুপুরের খবারে খরচ পড়বে ২০০ রুপি  আর ২৬০ টাকা বাংলাদেশি। শ্রীনগর থেকে দ্বিতীয় দিনে আপনি যেতে পারেন  গুলমার্গে। গুলমার্গ ঢোকার আগেই আপনার ড্রাইভার আপনাকে জন্য যথারীতি ড্রেস ভাড়া করার দোকানে নিয়ে যাবে। এখান থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে আপনি রওনা হতে পারেন গুলমার্গের স্পটের উদ্দেশ্যে। গাড়ি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ওপরে উঠতে থাকবে। গুলমার্গ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই চক্ষু ছানাবড়া হবে আপনার। দূরের সাদা পাহাড়গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকবে আপনার। নিচের সবুজ ভ্যালি দেখে মনে হবে আপনার কিছুদিন আগেই এখানেই শাহরুখ জাব তাক হে জান-এর ছবির স্যুটিং করেছিল। যাই হোক, প্রথমে একটি ঘোড়া ভাড়া করে গুলমার্গ ভ্যালির কিছুটা ঘুরে দেখতে পারেন। এরপর রোপওয়ের টিকেট কেটে গোন্ডলায় উঠে বসতে পারেন। ১২-১৩ মিনিট পর পৌঁছাতে পারেন ফ্যাজ ১-এ। যেদিকেই চোখ যায় সাদা আর সাদা। শুভ্র সাদা যে জীবনে দেখিনি, তার জন্য গুলমার্গ হবে দারুণ জায়গা।
হজরতবাল মসজিদে 
 শ্রীনগর সিটি ট্যুর। দুপুরের খবারের খরচ পড়বে ভারতীয় ২০০ রুপি আর বাংলাদেশি ২৬০ টাকা। সিটি ট্যুরের প্রথমেই আপনি যেতে পারেন হজরতবাল মসজিদে। কথিত আছে এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চুল সংরক্ষিত আছে। ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন একটা শান্তির অনুভূতি শরীরে দোলা দেবে। মসজিদটা খুবই সুন্দর। এর পেছন দিকের লেকটি তো আরো সুন্দর। কিন্তু সবচেয়ে ভালো লাগবে এর বাইরের পায়রাগুলো। ওদের খাওয়ানোর কথা কিন্তু ভুলবেন না আপনি।
এরপর আপনি যেতে পারেন নিশাদ বেগ পার্কে, এরপর শালিমার বেগ পার্কে তারপর বোটানিক্যাল গার্ডেন। হয়তো আপনি ভাবছেন এসব গার্ডেন  যাওয়ার দরকার কি। আপনি শুধু ভাবুন, গার্ডেনে সব গাছের পাতার রং যদি বিভিন্ন রকম হয়, তাহলে কেমন অনুভূতি হবে আপনার। আমি নিশ্চিত, মুখ দিয়ে শুধু একটি কথায় বের হবে আপনার আর সেটি হলো ‘ওয়াও’।
সবশেষে আপনি যেতে পারেন বিখ্যাত ডাল লেকে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আশাহত হতে পারেন ডাল লেকের নৌকা ভ্রমণে। কারণ অতিরিক্ত ভ্রাম্যমাণ দোকান, সঙ্গে মাঝিদের না ঘুরিয়ে সময় কীভাবে পাস করা যায় টাইপ ট্যান্ডেন্সি সত্যি মনটা খারাপ করে দিতে পারে আপনার।
ব্রেকফাস্ট করেই আপনি বের হতে পারেন পাহেলগাম-এর উদ্দেশে। লাঞ্চের পর একে একে ঘুরতে পারেন আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, চন্দন ওয়ারী। পাহেলগামের সৌন্দর্যই এই ভ্যালিগুলো। এত সাজানো-গুছানো। চোখ জুড়িয়ে যাবে আপনার। আরু ভ্যালির পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা জীবনের অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে আপনার।
ভোর ৬টায় জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারেন। একটু একটু করে দিনের আলো ফুটছে আর আপনি বুঝতে পারবেন গাড়ি কিসের ওপর দিয়ে চলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে চলছে। ভাবতেই গা শির শির করবে আপনার। সকালের নাশতা পথিমধ্যে খেয়ে নিতে পারেন ১০০ রুপির মাঝেই। ১/২/৩/৪ ঘণ্টা না, টানা আট ঘণ্টা এ রকম উচ্চতায় চলবে আপনাদের গাড়ি। অবশেষে আরো দুই ঘণ্টা জার্নি করার পর আপনি পৌঁছে যাবেন জম্মুতে। দুপুর ও রাতের খাবাবের জন্য বাজেট ৪০০ রুপি হিসাবে ৫২০ টাকা। রাতে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। টিকেট প্রাইস এক হাজার ৯৭০ রুপি হিসাবে দুই হাজার ৩৭০ টাকা। এদিন আপনার টোটাল খরচ তিন হাজার টাকা

এরপর সারা দিন ট্রেনে। খাবার বাজেট ৫০০ রুপি হিসাবে ৬৫০ টাকা। আপনি এরপর কলকাতা পৌঁছে যাবেন। হোটেলে চেক ইন করে আপনার ক্লান্ত  লাগতে পার । হোটেল+খাবারের জন্য সারা দিন আপনার খরচ হবে এক হাজার ২০০ রুপি হিসাবে এক হাজার ৫৬০ টাকা। ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে পারেন আপনি। এক হাজার ৮০০ টাকা+খাবার ৫০০ টাকা। আপনি যখন বাস থেকে নামবেন, তখন আপনার মনটাই খারাপ হয়ে যেতে পারে। সত্যি স্বপ্নের মতোই কয়েকটি দিন ছিল আপনার।
যোগ-বিয়োগ করে আপনি মিলিয়ে নিন আসলেই কাশ্মীর ভ্রমণ খরচ খুব বেশি কি না। এত কাছে পৃথিবীর স্বর্গ দেখতে না হয় একটু খরচই বা করলেন। তবে আপনার অতৃপ্তি থাকবে না।
অতিরিক্ত খরচ :
  • সোনামার্গ-এর বিভিন্ন স্পটে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩০০০ রুপি।
  • গুলমার্গের ঘোড়া ভাড়া ৬০০ রুপি এবং গোন্ডোলার টিকেট ৯০০ রুপি।
  • ড্রেস ভাড়া ২০০ রুপি
  • পাহেলগাম-এর বিভিন্ন স্পটে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩০০০ রুপি।

কোন মন্তব্য নেই

Maliketh থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.