Header Ads

করোনা যুদ্ধ ও একজন ইউএনও’র আবেগঘন মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস

আশরাফুল ইসলাম রাবু (ডেস্ক):
সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কাছে আতংকের এক নাম করোনা। কোভিড-১৯ নামক ভয়ংকর এ ভাইরাস গত ৪ মাসের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ২‘শ দেশে। মহামারি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কয়েকলক্ষ মানুষ আর মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় লক্ষাধিক। সুত্র-অনুযায়ী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে কোভিড-১৯ নামক এই ভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। যার নাম দেয়া হয় করোনা। চীনের থেকে সংক্রমিত হয়ে ধীরে ধীরে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর নানাদেশে। বর্তমানে প্রায় ২ ‘শ দেশের মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায় এ পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ১হাজার ১৮ জন মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ৯৫ হাজার ৭১৮ ব্যক্তি। এ পর্যন্ত সুস্থতা লাভ করেছে ৩লক্ষ ৫৪ হাজার ৯৭২ জন। অতিক্ষুদ্র কিন্তু ভয়ংকর এ জীবানুর সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে সারাবিশ্বকে। করোনা ভাইরাসের কারনে পৃথিবীর উন্নত ও সভ্যদেশগুলো আজ বিপর্যস্ত। বিশেষ করে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে ইতালিতে ১৮ হাজার, ফ্রান্সে ১২ হাজার ও যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উন্নত দেশের অনেক সরকার প্রধান ও রাজ পরিবারও করোনা সংক্রমন থেকে রক্ষা পায়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যয় বৈশ্বিক এ দূর্যোগের কাতারে সামিল হয়েছে বাংলাদেশ নামক দেশটি। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৪, মৃত্যুবরণ করেছে ২৭, একই সাথে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতা লাভ করেছে ৩৩ রোগী। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ এই মুহুর্তে রোগ সংক্রমনের চতুর্থ স্তরে রয়েছে। এর মানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে বহু মানুষ, বহু মানুষকে হাসপাতালে যেতে হবে, মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশই বাড়বে। এমন এক পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। ভাইরাসটি যাতে দ্রæত ছড়িয়ে না পড়ে এজন্য দ্রæততার সহিত গণপরিবহন বন্ধসহ সরকারি সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে সরকার। করোনার মত ভয়াবহ ভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক উদ্ভাবন না হওয়ায় প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোর দিয়েছেন সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি অনুসরণ করে সরকার জনসমাগম রোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে দিয়েছেন কঠোর নির্দেশনা। প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
    দেশের সীমান্তবর্তী খুলনা জেলার অন্যতম এক উপজেলা পাইকগাছা। সরকারি তথ্যানুযায়ী এখনো পর্যন্ত অত্র উপজেলার কোন মানুষ করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। তবে দেশের অন্যান্যস্থান থেকে ভাইরাসটি যাতে অত্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে এবং এলাকার মানুষ যাতে করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি এবং গ্রহণ করা হয়েছে  বিভিন্ন পরিকল্পনা। ভাইরাসটি যখনই আলোচনায় এসেছে তখন থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় জনসচেতনতার উপর। এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয় সচেতনতামূলক লিফলেট। মার্চের শেষদিকে এসে করোনা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নেয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটিসহ ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত গঠন করা হয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি। জনসচেতনতা কর্মসূচীর পাশাপাশি জনসমাগম রোধসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যছাড়া অন্য সকল ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের উপর। উপজেলা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে করোনা প্রতিরোধের এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জুলিয়া সুকায়না। করোনা প্রতিরোধে তিনি বলিষ্ট ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। তিনি দিন রাত ছুটে চলেছেন এলাকার মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য। কখনো তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনা অভিযানে, আবার কখনো তিনি পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমান আদালত। দীর্ঘদিন অঘোষিত লক ডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া দুঃস্থ অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষের দূর্ভোগের কথাও ভাবতে হচ্ছে তাকে। সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ ও করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন দূর্ভোগে থাকা এসব মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কখনো রাতের আধারে, কখনো দিনের আলোতে কর্মহীন মানুষের বাড়ীতে হাজির হচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি প্রাপ্ততার অনেক সীমাবদ্ধ রয়েছে। তারপরও তিনি যতটা সম্ভব সহায়তা করে যাচ্ছেন এলাকার শ্রমজীবী ও দুঃস্থ ও অসহায় মানুষকে। করোনা এ যুদ্ধে তিনি যেন এক অপরাজিত সৈনিক। নিজের পরিবার-পরিজনকে উপেক্ষা করে এমনকি নিজের নিরাপত্তার কথাও না ভেবে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এলাকা এবং এলাকার মানুষকে। তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্বটাকে সবসময় দেখেছেন বড় করে। করোনা এমন এক অদৃশ্য শক্তি কে-কখন এর দ্বারা আক্রান্ত ও সংক্রমিত হবেন এটা কেউ আমরা বলতে পারি না। এমন এক অজানা আশংকার মধ্যে বিরামহীন ছুটে চলেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকার কর্মকান্ডের ছবি যখন ছড়িয়ে পড়ছে কর্মক্ষেত্রের বিচরণ দেখে নানান প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছেন পরিবার ও পরিজনের কাছে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ চায় তাঁর পরিবারের লোক সুস্থ, সুন্দর এবং সুরক্ষিত থাকুক। ইউএনও জুলিয়া সুকায়নার ক্ষেত্রের হয়তো তার ব্যতিক্রম নয়। যার ফলে বিভিন্ন সময়ে নিজের পরিবার পরিজনের কাছে প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছেন। করোনা এ যুদ্ধে নিজের অবস্থান, এলাকাবাসীর করণীয় ও পরিবার পরিজনের নানান প্রশ্নকে ঘিরে ১০ এপ্রিল তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক আবেগঘন মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যে স্ট্যাটাসটি পরিবার-পরিজনসহ সাধারণ মানুষকে নির্বাক করে দিয়েছে। এমন মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস সদা হাস্যজ্বল একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দিতে দেখা যায়নি। এজন্য স্ট্যাটাসটি পড়ে সবাই যেন অনেকটাই মর্মাহত। সবাই ইউএনও’র করোনা যুদ্ধের যোগ্য নেতৃত্বের ভ‚য়শী প্রশংসা করে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য শুভ কামনা জানান। 

ইউএনও জুলিয়া সুকায়না তার স্ট্যাটাসে করোনা ভাইরাস প্রসংগে উল্লেখ করেছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা সারাক্ষণ অজানা আশংকা, উদ্বেগের মধ্যে দিনপার করছি। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি এ আশংকা, উদ্বেগকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। জানিনা মহান রাব্বুল আলামীন ভবিষ্যতে কি লিখে রেখেছেন। মেয়েদের বাবা আমাদের থেকে ৪০০কিঃ মিঃ দুরে অবস্থান করছেন। ফোন বা ভিডিও কলে যখনই কথা হয় সে বলে, এত কিছু করছো, সাবধানে থেকো বাইরে যাওয়ার আগে নিজের প্রোটেকশনটাও নিশ্চিত কোরো। মেয়েদুটোকে আর আমাকে এতিম করে রেখে চলে যেওনা। বড় মেয়ে জয়ী বলে- মা টেলিভিশনে বলছে করোনা থেকে বাচতে ঘরে থাকুন, তুমিও আমাদের বলছো ঘরে থাকতে, তাহলে তুমি কেনো ঘরে থাকোনা, তুমি কেন বাইরে যাচ্ছো? আমি বাইরে থেকে বাসায় ফেরার সাথে সাথে ছোট মেয়ে কৃতি দৌড়ে এসে কোলে উঠতে চায়, আমি যেই বলি এখনই কোলে নেয়া যাবেনা বাবা, সাথে সাথে তার কান্না শুরু হয়ে যায়, সেই কান্না থামানোই যায়না, আত্বীয়স্বজন,বন্ধুবান্ধব,শুভাকাঙ্ক্ষী প্রতিনিয়ত ফোন করে বলছেন,,দায়িত্বপালনের পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিও যেন একটু ভাবি, এতকিছুর পরেও সবাই যদি সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নিজগৃহে অবস্থান করতো, অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি না করতো তাহলে মনে হয় একটু হলেও শান্তি পেতাম। মহান রাব্বুল আলামীন সকলকে ভালো রাখুন,, সুস্থ রাখুন,,আমিন। করোনা যুদ্ধে ক্লান্তহীন সৈনিক ইউএনও জুলিয়া সুকায়নাসহ বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের মানুষকে সৃষ্টিকর্তা করোনা থেকে মুক্ত রেখে ভালো রাখুক, সুস্থ রাখুক, আগামীর পৃথিবী হোক করোনামুক্ত এমন প্রত্যাশা রইলো।

কোন মন্তব্য নেই

Maliketh থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.